রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: পুলিশের অপরাধ ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। কিছু সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। সম্প্রতি পরীমণির সঙ্গে ডিবি কর্মকর্তা সাকলাইনের প্রেমজ সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিব্রতবোধ করেন তারা। বিবৃতি দিতেও অনেকটা বাধ্যই হন। আবার ফেনীতে ২০টি স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের ঘটনাও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে আরেক দফায় বিব্রত হতে হয় সংস্থাটিকে। করোনাকালীন অনেক প্রশংসনীয় কাজ মানুষের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উচ্চাসনে পৌঁছে দিলেও কিছু সদস্যের দোষে তা আজ ম্লান হতে বসেছে।
১০ আগস্ট ফেনীতে পুলিশ সদস্যদের অসাধু একটি চক্র স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে স্বর্ণ লুট করে। এ ঘটনা আলোচিত হয় দেশব্যাপী। ঘটনায় মামলা দায়ের হলে গ্রেফতার করা হয় পুলিশের ছয় সদস্যকে। তারা হলেন, ডিবির পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাহের হোসেন, মিজানুর রহমান, নুরুল হক এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অভিজিত বড়ুয়া ও মাসুদ রানা।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয় পুলিশের ছয় সদস্য। তারা হলেন কনস্টেবল আব্দুল নবী, এসকান্দর হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শাকিল খান, মো. মাসুদ ও মোর্শেদ বিল্লাহ। গাজীপুরে এক অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় হাইওয়ে পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনাটির চলতি বছরের ৭ মে ঘটে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সূত্রাপুর থানা পুলিশের এসআই রহমাত উল্লাহ ও এএসআই রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা পুলিশ। ২০ জুন গ্রেফতার করা হয় তাদের।
এদিকে সোনার ২০টি বার ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেফতার ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক সাইফুল ইসলামসহ ছয় কর্মকর্তাকে ফের দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে চার দিনের রিমান্ড শেষে তাদেরকে ফেনী সদর আদালতে তোলা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মনির হোসেন আরও পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ খান এ আদেশ দেন।
এর আগে, রিমান্ড শেষে ডিবি পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ও ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোতাহের হোসেন, মিজানুর রহমান, নুরুল হক; এএসআই অভিজিৎ বড়ুয়া ও মাসুদ রানাকে শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফেনী থানা থেকে আদালতে আনা হয়।
এদিকে ডিবি পুলিশ সদস্যদের সোনার বার ডাকাতির মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তরের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আশা করছি আজকের মধ্যেই মামলাটি হস্তান্তর করা হবে। শনিবার দুপুরে ফেনী মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৮ আগস্ট রোববার বিকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন সোনা ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাস। ফেনীর ফতেহপুর রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা তার গাড়ি থামান। এ সময় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০টি সোনার বার ছিনিয়ে নেন তারা। এ ঘটনায় গোপাল কান্তি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে চার জনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে অন্য দু’জনকেও আটক করা হয়। পরে ব্যবসায়ীর করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির দুর্বলতাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। শুধু নজরদারি বাড়ানো নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারলে অনেকাংশে কমানো সম্ভব পুলিশ সদস্যদের অপরাধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশের মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের ওপর বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। তারা মাঠে বেশি দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। বিশেষ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও এসআই মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে জড়িত থাকেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতার চর্চার প্রবণতা দেখা যায় বেশি। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান আরও বলেন, ‘শুধু ক্লোজ কিংবা ট্রান্সফার যদিও একটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, তারপরও বিচার না হলে অনেকেই এ ধরনের অপরাধে উৎসাহী হয়ে পড়বে। কিছুটা কঠিন বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘পুলিশকে তো আর আইনের বাইরে রাখা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি কিংবা ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। পুলিশের কোনো সদস্য যখন অভিযুক্ত হয়, অপরাধে জড়িয়ে যায়, তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। অপরাধ প্রমাণে শাস্তিও হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুধু একটি ডিপার্টমেন্টের ওপর সীমাবদ্ধ নয়। সবার ভেতরেই জবাবদিহিতা থাকা দরকার। পুলিশের কোনো সদস্য আইনবহির্ভূত কাজ করলে সেটা বাহিনীর জন্য অবশ্যই বিব্রতকর।’
পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার এআইজি সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদস্যদের ভালো কাজে যেমন স্বীকৃতি ও পুরস্কারের আয়োজন রয়েছে, তেমনি কেউ অপরাধ করলে বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তির আওতায় আনা হয়। প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply